শিয়া জাহানের বিশিষ্ট আয়াতুল্লাহ্ আল্ উযমা
হাজী শেইখ মুহাম্মদ ফাযেল
ল্যানকারানী (মুদ্দা যিল্লাহুল আলী)-এর
সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্য
ভূমিকাঃ
আয়াতুল্লাহ্ আল্ উযমা হাজী শেইখ মুহাম্মদ ফাযেল ল্যানকারানী আজকের বিশ্বে
জ্ঞান, ঈমান ও আমলের দিক দিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে একজন এবং বিশ্ব শিয়া
মাযহাবের একজন নামকরা মার্জায়ে তাকলীদ। শিয়া বিশ্বে তার হাজার হাজার মুকাল্লিদ ও
ভক্তবৃন্দ রয়েছে। এই সংক্ষিপ্ত জীবনালেখ্যতে আমরা তার ব্যাপারে সংক্ষেপে কিছু
জানবো। আগামীতে আমরা ইন্শাআল্লাহ্ তার সম্পূর্ণ জীবনালেখ্য আপনাদের মাঝে তুলে ধরতে
সক্ষম হবো বলে আশাবাদী।
জন্মগ্রহণঃ
তিনি ফার্সী ১৩১০ হিজরী সনে ইরানের পবিত্র কোম নগরীতে ভূমিষ্ঠ হন। তার মহান পিতা
মরহুম আয়াতুল্লাহ্ ফাযেল ল্যানকারানী শুধুমাত্র একজন বড় আলেমই ছিলেন না বরং বুযুর্গ
ব্যক্তিদের মধ্যে বিশেষ সম্মানিয় ব্যক্তি ও হাওযা-ই-ইলমিয়া কোমের একজন উচ্চ
পর্যায়ের ওস্তাদ ছিলেন। তার মাতাও এক বিশিষ্ট ইসলামী পরিবারের ছিলেন।
শিক্ষা জীবনঃ
ওস্তাদ সেই ছোটে বেলা থেকেই দারুণভাবে তার পিতার আধ্যাত্মিকতায় আকৃষ্ট হয়ে পড়েন
এবং ঐ পবিত্র মনেই নিজের অজান্তে পিতার পথধারাতেই নিজের জীবন অতিবাহীত করবেন বলে
সিদ্ধান্ত নেন। আর তাই মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে ১৩ বছর বয়সে ইসলামী জ্ঞান অর্জনের
লক্ষ্যে তিনি হাওযা-ই-ইলমিয়া কোমে লেখা-পড়া শুরু করেন। ৬ বছর সময়ের মধ্যেই প্রাথমিক
পর্যায়ের শিক্ষা শেষ করে ১৯ বছর বয়সে তিনি দার্সে খারিজে উসূল ও ফীকা শাস্ত্রে
অধ্যয়ন শুরু করেন। এ পর্যায়ের শিক্ষা অর্জন কালে হযরত মুসতাফা খোমেনী (রহঃ) তার
বন্ধু হন।
শিক্ষকবৃন্দঃ
১১ বছর ধরে দার্সে খারিজে আয়াতুল্লাহ্ আল্ উযমা বুরুজার্দীর (রহঃ) এবং ৯ বছর
ধরে আয়াতুল্লাহ্ আল উযমা ইমাম খোমেনীর (রহঃ) কাছে উসূল ও ফীকা শাস্ত্রের উপর
শিক্ষা অর্জন করেন।
এর সাথে সাথে কয়েক বছর আয়াতুল্লাহ্ তাবাতাবাই (রহঃ)-এর কাছে দর্শন ও তফসির
শিক্ষা করেন।
তিনি ২৫ বছর বয়সে ইজতিহাদের মর্যাদায় পৌছান আর সেই ইজতিহাদের সনদটি হযরত
আয়াতুল্লাহ্ আল্ উযমা বুরুজার্দীর (রহঃ) হাতে স্বাক্ষরিত হয়।
শিক্ষাকতা জীবনঃ
ওস্তাদ সেই ১৫/১৬ বছর বয়স থেকেই শিক্ষাকতা শুরু করেন। প্রথম দিকে তার ক্লাসে
৭০/৮০ জন শিক্ষার্থী অংশ গ্রহণ করতো। ১৯ বছর বয়সে যখন তিনি ইজতিহাদের মর্যাদায়
অধিষ্ঠিত হন তখন থেকে তার ক্লাসে প্রায় ১০০ জন শিক্ষার্থীর সমাগম হত। পরবতীর্তে যখন
তিনি কিফায়াতুল উসূল-এর ক্লাস নিতেন তখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬০০/৭০০ জনে
পৌছে যেত। আর ক্লাসের বক্তব্যগুলো রেকডকৃত অবস্থায় রয়েছে যা আজও শিক্ষা অর্জনের
কাজে সহায়ক হচ্ছে। তিনি বর্তমানে প্রায় ২৫ বছর ধরে দার্সে খারিজের ক্লাস নেন। এ
পর্যন্ত তার হাতে অনেক আলেম তৈরী হয়েছে। যারা তাদের পরিসরে সফলতা অর্জন করছে।
শিক্ষাকতা ছাড়াও তিনি ফার্সী ও আরবীতে অনেক পুস্তক পুস্তিকা লিখেছেন। যা দ্বীনি
শিক্ষা অর্জনের ক্ষেত্রে আরো এক ধাপ এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে। আল্লাহ্ আমাদের সকলের
সহায় হন।
রাজনৈতিক অঙ্গনে তাগুত সরকার শাহের বিরুদ্ধাচারণঃ
যখন থেকে হযরত ইমাম খোমেনী (রহঃ) তাগুত সরকার শাহের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে
নিজের রাজনৈতিক কর্র্মকাণ্ড শুরু করেন তখন থেকে তিনি ইমামের একজন সফল সাথী হিসেবে
তার পাশে পাশে ছিলেন এবং যেভাবে ইমাম নিদের্শ দিতেন তিনি সেভাবেই পা উঠাতেন ও
ইসলামী বিপ্লবের একজন সুভাকাঙ্খি হিসেবে কাজ করতেন। এ ছাড়াও তিনি সে সময় জামেয়া
মুদাররেসিনের একজন সফল কর্মী হিসেবেও চিহ্নিত ছিলেন। তিনি ইমামের দেয়া বিভিন্ন
নিদের্শকে লিফলেট আকারে প্রকাশ ও প্রচার করতেন, যার কারণে অনেক বার শাহ্ সরকারের
প্রশাসনের পক্ষ থেকে গ্রেফতার হন এবং তারা তাকে কয়েক বার রিমাণ্ডেও নিয়ে যায়। শেষ
অবধি তারা তাকে বন্দর ল্যানগাহ নামক স্থানে নিরার্ষন দেয়। তার ৪ মান নিবার্ষিত জীবন
অতিবাহীত হওয়ার পর তারা তাকে পুনরায় সেখান থেকে ইয়াযদ নামক স্থানে নিবার্ষিত করে।
তিনি সেখানে দুই বছর নিবার্ষিত জীবন অতিবাহীত করেন।
সকল স্থরেই ইমাম, ইসলামী বিপ্লব ও ইসলামী দিকসমূহকে সাহায্য করাঃ
তিনি ইমামের বিপ্লবী কর্মকাণ্ডের সাথে সাথে ইসলামী বিপ্লব ও মাযহাবে তাশাইয়্যোকে
টিকিয়ে রাখার জন্য নিরলস ভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে গিয়েছিলেন এবং নিজেই একজন সৈনিকের
ভূমিকা পালন করেছিলেন। তিনি তার সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে একগ্রচিত্তে মাযহাবে তাশাইয়্যো
ও বেলায়ত এবং ইসলামী সংস্কৃতিকে দৃঢ় করার কাজে মশগুল ছিলেন। তার পক্ষ থেকে বেলায়তে
ফকি, সমাজকে ইসলামীকরণ করা ও ইসলামী শাসনের উপর দেয়া বিভিন্ন বক্তব্য উল্লেখযোগ্য
এবং ইসলাম বিরোধীদের সাথে তার কঠোর আচরণ, ইসরাঈলের বিরুদ্ধে তার বলিষ্ট বক্তব্য,
আফগানিস্তানী জনগণের প্রতি সরকার নিবার্চনী ভোটে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানোই
সে সবের প্রমাণ মিলে যায়।
নবুওয়াতের আহলে বাইতের সাথে মুহাব্বাত ও বন্ধুত্বঃ
তার খানদানের সুচনা লগ্ন থেকেই পরিবারের সকলেই আহলে বাইতগণের (আঃ) প্রতি
মুহাব্বত ও বন্ধুত্বতা স্থাপন করে রেখেছেন এবং সব সময় মাসুমিনগণের (আঃ) শাহাদাতে
আযাদারী বা মজলিস এবং জন্ম বাষির্কিতে আনন্দ ঘন অনুষ্ঠানে তাদের ঘরে উত্যাপিত হয়ে
আসছে এবং বর্তমানে তা বহাল রয়েছে।
যখন মার্জা হলেনঃ
হযরত ইমাম খোমেনী (রহঃ)-এর ইন্তেকালের পরে অনেক মুমিনিন তাকলিদের জন্য তার
সরণাপন্ন হয় এবং আয়াতুল্লাহ্ আল্ উযমা আরাকি (রহঃ)-এর ইন্তেকালের পরে ফার্সী ১৩৭৩
সালের ১১ মাসের ৯ তারিখে জামেয়া মুদাররেসিন (উচ্চ পর্যায়ের দ্বীনি শিক্ষকদের
কমিটি) হওযা-এ-ইলমিয়া কোমের পক্ষ থেকে সরকারী ভাবে তাকে মার্জা হিসেবে স্বীকৃতি
দেয়।
ফীকা শাস্ত্রের উপর পাঠাগার স্থাপনঃ
তিনি শিয়া মাযহাবের প্রচার ও প্রকাশের লক্ষ্যে ফকিহ্ তৈর অর্থাত্ মুজতাহিদ
তৈরীর জন্য উক্ত প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করেন। বর্তমান সময় পর্যন্ত উক্ত প্রতিষ্ঠানটি
আল্লাহ্ তায়ালার বিশেষ তৌফিকে অনেক মুজতাহিদ, গবেষক ও লেখক সমাজে দিতে সক্ষম
হয়েছে। যাদের পেয়ে সমাজ উপকৃত হয়েছে। তাই সমাজো উক্ত প্রতিষ্ঠানটিকে যথেষ্ট
গুরুত্বের সাথে দেখে থাকে।
রচনাবলীঃ
তিনি শিক্ষকতার সাথে সাথে দ্বীনি ছাত্রদের গড়ে উঠার লক্ষ্যে অনেক বইও লিখেছেন
যার তালিকা আমরা নিম্নে তুলে ধরলামঃ
- তাফছিলুশ শারীয়াহ (আরবী)।
- উরওয়াতুল ওয়াসকা ব্যাখ্যা সম্বলিত বই (আরবী)।
- নিহায়াতুত তাকরির (আরবী)।
- আত্ তাহরাতু মিসবাহুল ফাকিহ্ (আরবী)।
- আল ইজতিহাদ ওয়াত তাকলিদ (আবরী)।
- কিতাবে ছোওম (আরবী)।
- কিতাবে আল কাযা (আরবী)।
- আল মাসায়েলুল মুসতাহদিছাসা (আরবী)।
- সন্দেহযুক্ত পোশাক পরে নামাযের ফতোয়া সম্বলিত রেসালাহ্ (আরবী)।
- হাজ্জ ও ওমরাহ্ সংক্রান্ত ফতোয়া (আরবী)।
- আল্ আহকামুল ওয়াযেহাহ্ (আরবী ফতোয়া)।
- আহকামে হাজ্জ (আরবী)।
- আল্ কাওয়ায়েদুল ফেকহিয়াহ্ (আরবী)।
- মুতামেদুল উছুল।
- তিবিয়ানুল উছুল (আরবী)।
- তাকরিরাতুল উছুল (আরবী)।
- রিসালাহ্ (আরবী)।
- খরিজে উছুল (ফার্সী) ১৬ খণ্ড।
- মানাসেকে হাজ্জ (ফার্সী)।
- মাদখালুত তাফসির (আরবী)।
- সূরা হামদের তফসির (আরবী)।
- তাকিয়াহ্ (ফার্সী)।
- ইমাম আলী (আঃ)-এর দৃষ্টিতে দেশ পরিচালনা।
- আম্বীয়াগণের ইসমাত।
- মাজমুয়ুল ফিহারেস (আরবী)।
- আয়াতে তাতহিরে আহলি বাইত (আঃ) বা নুরানী চেহারাসমূহ।
- কোরআনে করিমে আইম্মে আতহার (আঃ) বা ওহীর রক্ষকগণ।
- মানাসেকুল হাজ্জ।
- ইসতিফতায়াতু হাউলিল হাজ্জ।
- ইসতিফতায়াতে হাজ্জ।
- জামেয়ুল মাসায়েল।